মেহের ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে ইন্দ্রনীল সাহার লেখা
উত্তরাখণ্ডের বিপর্যয় নিয়ে কথা বলতে গিয়েছিলাম মেহের ইঞ্জিনিয়ারের সাথে$ মূলত আমাদের উদ্দেশ্য ছিল বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি সম্পর্কে জানাবোঝা$ তার মধ্যে প্রাথমিক বিষয়টা ছিল এই ভয়াবহতার কারণ কী? আলোচনার শুরুতেই আমরা বলি, বিপর্যয়টা শুধুমাত্র উত্তরাখণ্ডেই সীমাবদ্ধ ছিল না$ বিপর্যয়ের বিশালতা রাজনৈতিক সীমারেখা মেনে চলেনি$ হিমালয়ের আশ্রয়ে থাকা ওই অঞ্চলের সমস্ত জায়গাই তার সীমার মধ্যে ছিল$ তারও আগে আমরা জানতে চাই এই বিপর্যয়টা কেন হল?
মেহেরদা কথা শুরু করলেন একটা শব্দের গল্প দিয়ে$ শব্দটা ২০০৫ সালের আগে আমাদের ভাষার মধ্যে ছিল না$ শব্দটা হল Cloudburst$ মুম্বাইয়ের Cloudburst–এর আগে এই শব্দটা আমাদের, সমতলের মানুষদের ভাষার মধ্যে ছিল না$ তারপর লেহ্–এর ঘটনা$ তার মানে কিন্তু এই নয় যে Cloudburstছিল না$ গোটা হিমালয় অঞ্চলেই Cloudburstএকটি সাধারণ ঘটনা$ পাহাড়ি মানুষরা জানে Cloudburstহবে, যখন হবে তখন নদী তেড়ে নেমে আসবে কারণ নদী ওখানে নালার মতো$ চওড়ায় অনেক কম$ সমতলের একূল–ওকূল নদীর সাথে তার কোনো তুলনাই করা চলে না$ সুতরাং Cloudburstএকটি সাধারণ ঘটনা এবং আদৌ অপ্রত্যাশিত নয়$ মেহেরদা বলে চললেন ‘আমি যখন দেরাদুনে ছিলাম, ১৯৭০–এর দশকে, আমি দেখতাম জুন মাসে বৃষ্টি আসতই না, জুলাইয়ে মাঝে মাঝে আসত, বর্ষা আসত আগস্ট থেকে$
পুরোদমে বানভাসি বর্ষা হত আগস্ট মাসে$ এ হল ভারতীয় বর্ষার চরিত্র$ যেখানে পড়বে না তো ছিটেফোঁটাও পড়বে না, যেমন গুজরাট, রাজস্থান, সৌরাষ্ট্র — পশ্চিমঘাটের উল্টোদিকে, যাকে বলে রেইন শ্যাডো$ আর যেখানে পড়বে, তো ঢেলে পড়বে$ শহরগুলো এই ঢেলে পড়া বৃষ্টির সামনে অসহায়$ নিকাশি ব্যবস্থা ভালো থাকলে কিছুটা সুরাহা নিশ্চয়ই হয় কিন্তু তার সীমা আছে$ মুম্বাই বা কলকাতা যদি জল বের করে সমুদ্রে ফেলতে না পারে তাহলে জল জমে যাবে$ কারোরই কিছু করার নেই$ কিন্তু পাহাড় সেরকম নয়$ পাহাড় তো নিজেই এক বিরাট নালা! বৃষ্টি পড়ছে, মাটির সাথে মিশে অন্তঃসলিলা হয়ে মিশছে নদীর বিভিন্ন ধারা উপধারার সাথে$ আর ঢালু পথে সেই জল নেমে আসছে নিচের দিকে, কোনো ব্যতিক্রম নেই’$ মেহেরদা একটু থামলেন$ তারপর বলে চললেন ‘তো, বৃষ্টি হবে$ মৌসুমী বায়ুর নিয়ম মেনে, তার গতিপথ মেনেই বৃষ্টি হবে তাতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই$ কিন্তু উত্তরাখণ্ডের গল্প শুরু হয় ২০০০ সালে$ কুমায়ুন আর গাড়োয়ালের দুটি জেলা নিয়ে তৈরি হল উত্তরাখণ্ড$ তার আগে তো আজকের উত্তরাখণ্ড ছিল উত্তরপ্রদেশে$ সেখানে তাদের অবস্থা ছিল খুবই খারাপ$ পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে যেমন জলপাইগুড়ি আর কোচবিহেরর করুণ অবস্থার কথা আমরা বলাবলি করি, একইরকমভাবে উত্তরাখণ্ড অঞ্চলও ছিল চূড়ান্ত অবহেলিত, বঞ্চিত, কোনঠাসা$ শুনতে হত, ‘তুম তো পাহাড়ি হো, তুমকো কেয়া পাতা’ এই জাতীয় কথাবার্তা$ উত্তরাখণ্ড হওয়ার ফলে, ওরা খুবই আনন্দে ছিল। কিন্তু এখন তো শুধুই নিরানন্দ’$ মেহেরদা বলে চললেন ‘এতগুলো প্রজেক্ট করেছে ওখানে …$’
আমরা জিজ্ঞেস করলাম, ‘এগুলো কি সব ২০০০–এর পরেই হয়েছে?’
— না তা নয়, এগুলোর অনেকগুলোই শুরু হয়েছিল ১৯৯৩ সালে$ কিন্তু কাজ গতি পেয়েছে সেই ২০০০–এর পরই$
মেহেরদা এবারে খুললেন একটা সরকারি রিপোর্ট$ Performance Audit of Hydropower Development through Private Sector Participation$ এটা CAGবা ক্যাগের রিপোর্ট$ এটি আছে কেন্দ্রীয় সরকারের CAG–এর ওয়েবসাইটে$ সরকারি এই রিপোর্টের বিশেষ একটি তাৎপর্য হল, এটি পারফরম্যান্স অডিট অর্থাৎ বাস্তবে কাজ কী হয়েছে তা মিলিয়ে দেখা হবে$ খাতায়–কলমে হিসাবের গোঁজামিল দিয়ে পার পাওয়া যাবে না$ এটাও লক্ষ্যণীয় যে এই প্রজেক্টটি সরকারি এবং বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে$ মেহেরদা চলে গেলেন রিপোর্টের প্রথম অংশে উত্তরাখণ্ডের বিদ্যুৎ উৎপাদনের বর্তমান চেহারাতে$ বিদ্যুতের ব্যাপারে উত্তরাখণ্ড এখনও সম্পূর্ণ স্বনির্ভর নয়$ তাকে অন্য রাজ্য থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করতে হয়, যখন নদীতে জল কম থাকে, মানে নভেম্বর থেকে মার্চ বা মে মাস পর্যন্ত$ আবার যখন নদীতে জল থাকে তখন সে বিদ্যুৎ রপ্তানি করে$ উত্তরাখণ্ডের বিদ্যুতের চাহিদা ৫ গুণ বেড়েছে ২০০২ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত$ এ প্রসঙ্গে এল উত্তরাখণ্ডে থাকেন এক কোটির কিছু বেশি লোক$ আর কেদারনাথের বসতি ২০০১–এর সেন্সাসের হিসাবে ৪৭৯ জন$ এদের প্রায় পুরোটাই পুরুষ, ৯৮%$ এদের মধ্যে ৬ বছরের নিচে কেউ নেই$ মানে পুরোটাই কাজের লোক$ এদের মধ্যে কিছু সাধুও আছে$ আর চালু সিজনে এই সংখ্যাটাই দাঁড়ায় দিনে ৫০০০–এর বেশি$ যে কথাটা এর মধ্য দিয়ে মেহেরদা বলতে চাইছিলেন সেটা হল, বাইরের লোক ট্যুরিস্ট যেমন যেমন আসছে, তাদের সাথে পাল্লা দিয়েই বাড়ছে দুর্গম কেদারনাথের বাসিন্দা আর বাড়ছে বিদ্যুতের চাহিদা$
মেহেরদা বলতে লাগলেন, ‘এবছর বৃষ্টি প্রচুর হয়েছে এবারে$ প্রথমত এবছর বর্ষা অনেক আগে এসেছে, প্রায় একমাস আগে$ ভারতের জলবায়ুর ইতিহাসে, সে ইতিহাস অবশ্য খুব পুরোনো না, ১৯৬০ থেকে লিখিত, এত আগে বর্ষা কোনোদিন আসেনি$ আর বৃষ্টি হয়েছেও প্রচুর$ জুনের প্রথম তিন সপ্তাহে বৃষ্টি হয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে তিনগুণ বেশি$ এর মধ্যে জুনের ১৩ থেকে ১৯ এর মধ্যে বৃষ্টি হয়েছে স্বাভাবিকের তুলনায় ৮ গুণ$ জুনের ১১ থেকে ১৭ তারিখের মধ্যে বৃষ্টি হয়েছে ২০ ইঞ্চি$’
‘তুমি যদি ওপর থেকে তোলা ছবি দেখ তাহলে দেখতে পাবে এখানে গাছ নেই$ গাছ থাকলে তা বৃষ্টিকে বেশ খানিকটা নিয়ন্ত্রন করতে পারে$ পাতার ছাউনি থাকে, বৃষ্টির গতিটা কমে যায় আর মাটিকে রক্ষা করে$ কিন্তু এখানে তো গাছ নেই$ ফলে বৃষ্টি আছড়ে পড়ছে ঝুরো মাটির ওপর$ হিমালয় পৃথিবীর নবীনতম পাহাড়$ পূর্ব বা পশ্চিমঘাটের মতো নয়$ হিমালয়ে মাটি এখনো অনেক নরম$ হিমালয় এখনো বেড়ে চলেছে, গড়পড়তা ২ মিমি প্রতি বছর$ একটা বিস্তীর্ণ এলাকা, কয়েকটা দেশ, যেমন ভারত, তিব্বতকে প্রতিদিন হিমালয়ের এই বাড়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে$ গোটা অঞ্চলটাই ওঠা নামার মধ্য দিয়ে যাবে$ এই উঠবে আবার পড়ে যাবে এসবতো হবেই$ একেবারেই স্বাভাবিক$’
‘এই রকম জায়গার মধ্যে, প্রকৃতির অকৃপণ দান জল আর নদীকে কাজে লাগিয়ে তারা কতগুলো পাওয়ার প্ল্যান্ট করেছে আর সেগুলো সবই সরকারি–বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে$ এদের উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ মেগাওয়াট থেকে ৩০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত’$ এ প্রসঙ্গে এল ৬৯টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প চালু ছিল ১৬ জুনের আগে$ এখানে একটা কথা উঠল$ সরকারিভাবে, এদের বলা হচ্ছে Run-of-the-river hydroelectricityঅর্থাৎ নদীর জলকে বাঁধ দিয়ে ধরার কোনো দরকার নেই, শুধু তার গতিপথে টারবাইনের চাকা বসিয়ে দিলেই হল$ এমনটা হলে তো আর বলার কিছু থাকে না$ নদীর স্বাভাবিক গতিকে বাঁধ যেমন বাধাপ্রাপ্ত করে তেমনটা তো এক্ষেত্রে হচ্ছে না$ এবারে মেহেরদা বললেন ‘কিন্তু তুমি আমায় বোঝাও তো ৩০০ মেগাওয়াট তুমি Run-of-the-river–এ কী করে পাবে? হিমালয়ের কোনো নদী কি স্বাভাবিকভাবে এত বিপুল জলবিদ্যুৎ দিতে পারে?’অর্থাৎ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে যাই বলা হোক না কেন, বাঁধ দেওয়া হয়েছে$ সেই বাঁধের জলকে স্বাভাবিক গতিপথের বাইরে দিয়ে অপেক্ষাকৃত সরু গতিপথ দিয়ে তীব্র বেগে চালানো হয়েছে তবে টারবাইনের চাকা ঘুরে ৩০০ মেগাওয়াট তৈরি করেছে$
আলোচনাতে উঠে এল আরও একটি কথা$ এই বিপর্যয় কিন্তু শুধু মেঘ ভাঙ্গার কারনেই হয়নি$ এর সাথে কাজ করেছে হিমবাহর গলে পড়া জলও$ এই প্রসঙ্গে এল বিশ্ব উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর জন্য কতটা দায়ী? এককথায় মেহেরদা বললেন, ‘দায়ী তো বটেই$ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে$ অঞ্চলভেদে কোথাও হিমবাহ গলে যাচ্ছে আবার কোথাও মাত্রা ছাড়িয়ে বেড়ে যাচ্ছে$ সাধারণভাবে হিমালয়ের দক্ষিণ–পূর্ব দিকে অর্থাৎ আসাম, তিব্বত, নেপাল এই অঞ্চলটাতে হিমবাহ গলেই চলেছে’$ আলোচনা এগোনোর পর এবিষয়ে মেহেরদা আরও বলেছিলেন তাঁর ধারণার কথা$ বলেছিলেন গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের ফলে এই ঋতুচক্রের পরিবর্তন অর্থাৎ বর্ষার প্রায় একমাস এগিয়ে আসাটা হয়তো অঙ্কের সাহায্যে প্রমাণ করে দেখানো যায়, যদিও অঙ্কটা অতি দুরূহ এবিষয়ে সন্দেহ নেই$ মেহেরদার লেখাতে এবিষয়ে অনেকটা উল্লেখ আছে$ গ্লোবাল ওয়ার্মিং ঘটছে অনিয়ন্ত্রিত ফসিল ফুয়েল অর্থাৎ পেট্রোল ডিজেল পোড়ানোর ফলে$
এবারে মেহেরদা কম্পিউটার স্ক্রিনে খুললেন কেদারনাথ মন্দিরের ছবি$ গোটা মন্দিরটা শক্ত গ্রানাইটের$ এই মন্দিরের বয়স তার গায়ের লেখচিত্রের হিসাব অনুযায়ী অন্তত খ্রীষ্টপূর্ব ৮৫০ শতাব্দী$ কখনো হয়তো পুরো মন্দিরটাই চাপা পড়ে গেছে আস্ত হিমবাহের নিচে আবার যখন সে সরে গেছে বা গলে গেছে জল বেরিয়ে প্রবাহিত হয়ে গেছে কিন্তু তার বয়ে আনা পাথর, কাদা, মাটি যেন আঁচড় কেটে গেছে গ্রানাইটের গায়ে$ ফলে মন্দিরের সব ভেসে গেলেও মন্দির রয়ে গেছে$ কেউ জানে না যখন মন্দির তৈরি হয় তখন ওখানে হিমবাহ ছিল কিনা$ হয়তো হিমবাহের মাঝে ছোটো একটা ফাঁকা জায়গাতেই তৈরি হয়েছিল কেদারনাথ মন্দির$ হিসাব নিকাশ করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন প্রায় ৩০০ বছর আগে শেষ হিমবাহ যা আচ্ছন্ন করে রেখেছিল মন্দিরকে তা সরে যায় আর যাবার সময় রেখে যায় আঁচড়ের দাগ$ মেহেরদা বললেন, ‘এই হচ্ছে ভারতের মন্দিরের বৈশিষ্ট$ রুদ্রপ্রয়াগেও একই ব্যাপার$ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মন্দির ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কিন্তু কখনোই বিলীন হয়ে যায় না$’
‘কিন্তু টাউন ভেসে গেছে$ কেন ভেসে গেছে? পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ$ ভারতে ১৯৯২ সালের পর থেকেই তৈরি হয়েছে মধ্যবিত্ত, উচ্চ–মধ্যবিত্ত আর এদের চাহিদা মেটাতেই তৈরি হয়েছে একের পর এক মল যেমন সাউথসিটি মল$ কলকাতাতে তবু ভালো, অন্তত কনস্ট্রাকশন হয় কিন্তু ওখানে তো সেসবেরও কোনো বালাই নেই$ যার যেরকম খুশি একটার পর একটা বিল্ডিং দাঁড় করিয়ে গেছে প্রকৃতি, মাটির ধারণ ক্ষমতা বা অন্য কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করেই আর সেখানে গিয়ে উপস্থিত হয়েছে একের পর এক শহুরে উচ্চ–মধ্যবিত্তের দল’$
কথা প্রসঙ্গে উঠল EPW–র একটি রিপোর্টের কথা$ সেখানে উল্লিখিত হয়েছে নদীর দুধারে অন্তত ২০০ মিটার জায়গা ছেড়ে রাখা উচিত নদীর স্বাভাবিক গতির জন্য$ একে বলা হয় floodplain$ কিন্তু উত্তরাখণ্ডে floodplainছাড়া তো দূরস্থান প্রায় নদীর ভেতরে ঢুকে বাড়ি বানানো হয়েছে$ নদীর অববাহিকা যখন বাসযোগ্য হিসাবে গড়ে তোলা হয় তখন তুলনামূলকভাবে নিরাপদ এবং বাসযোগ্য জায়গাতে বড়লোকরা বাড়ি করে নেয়$ মেহেরদা বললেন, গরিব যখন ঝোপড়ি বানায় তখন এরকমই বানায়, জল নেই, নিকাশি ব্যবস্থা নেই নদীর ধারে বা একেবারে ভেতরে জোড়াতালি দেওয়া বাসস্থান যার ভেসে যেতে এক মুহূর্তও সময় লাগে না’$
পরে ক্ষতিপূরণের খতিয়ান হিসাব করতে গিয়ে মেহেরদা বলেছিলেন বিরাট অঙ্কের টাকার ক্ষতিপূরণের দায় চেপেছে বিমা কোম্পানিগুলির ঘাড়ে$ এর সবটাই হল জলবিদ্যুৎ কোম্পানিগুলির আর গাড়ির, যা ভেসে গেছে$ কিন্তু নদীর ধারে বেআইনি বা আধা–আইনি বাড়িঘরগুলিতে থাকা মানুষগুলিরই কোনো হিসাব নেই, তার আবার সম্পত্তি আর ক্ষতিপূরণ!
এত বাসস্থানের দরকার হল কেন, হঠাৎ করে? মেহেরদা বললেন, ১৯৭০–এর দশকে এর প্রায় কিছুই ছিল না, এসবই হয়েছে উত্তরাখণ্ড হওয়ার পরে উন্নয়নের জোয়ারে$ আর আজ মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, এ হল হিমালয়ান সুনামি! মানে যা করার প্রকৃতিই করেছে, মানুষের তথা সরকার বা রাষ্ট্রের তাতে কোনো হাত নেই$ এবারে মেহেরদা যেন রেগেই গেলেন ‘প্রকৃতি মানে — টাউনটা প্রকৃতি বানিয়েছে? ৫ হাজার লোক প্রতিদিন ওখানে যেত সেটা প্রকৃতি করেছে তাই তো? প্রকৃতি বানিয়েছে বাঁধ বুঝি? হেলিকপ্টার যাবার হেলিপ্যাড ছিল উত্তরাখণ্ডে$ ১৯৭০–এর দশকে দেরাদুনে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত ছিল না, যেটা ছিল সেটা ছিল মিলিটারির জন্য’$
কিন্তু এখন সময় পুনর্গঠনের$ বিমা কোম্পানির টাকায় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলি হবে আর উত্তরাখন্ডের জন্য বিশ্ব ব্যাঙ্ক মঞ্জুর করেছে টাকা, মুখ্যমন্ত্রী বহুগুনা পুর্নগঠন করবেন উত্তরাখণ্ড$ জিতেনদা প্রশ্ন করলেন, ‘এই পুনর্গঠন নিয়ে কোনো প্রশ্ন করা হচ্ছে না?’প্রায় শেষ করতে না দিয়ে মেহেরদা বলতে লাগলেন, ‘না না কীসের প্রশ্ন? কোথাও তুমি দেখছ উত্তরাখণ্ড নিয়ে কেউ কথা বলছে? মিডিয়া এখন নতুন নতুন আরও মুখরোচক ইস্যুতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে ফলে কীসের প্রশ্ন? এখন যদি উত্তরাখণ্ডের মানুষ এই প্রশ্ন তোলে আর আমরাও যদি গিয়ে সেই প্রশ্নগুলিকে একটু সামনে আনতে পারি … কিন্তু তুমি তো জানো আমাদের পলিটিক্স$ এখানে গঠন, ধ্বংস, পুনর্গঠন সবটাই পয়সার হিসাবে$ আর কে না জানে যদি ব্যাবসা বাড়াতে চাও তো ভাঙো আবার তৈরি করো যেমন আমরিকা করে চলেছে ইরাকে — প্রথমে ধ্বংস আর তারপরে পুনর্গঠন।
জিতেনদা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘এর আগেও কয়েক বছর ধরেই ধসটা একটু বাড়াবাড়ি রকমই হচ্ছিল$ তা সত্ত্বেও কি কোনোরকম সতর্কতা বা নিয়ন্ত্রণ আসেনি এই অনিয়ন্ত্রিত প্রকৃতি ধ্বংস করা উন্নয়নযজ্ঞে, ড্যাম, টাউনশিপ, রাস্তার?’এর উত্তরে মেহেরদা বললেন ‘ক্যাগের রিপোর্ট শোনো$ আমি কোট করছি$ The State’s policy on hydropower projects was silent on the vital issue of maintaining downstream flow in the diversion reach$ অর্থাৎ নদীর স্বাভাবিক গতিপথকে ব্যাহত করে তৈরি (চিত্র ১)’।
১নং চিত্র দেখলে ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে$ নদীর স্বাভাবিক গতি আঁকাবাঁকা$ তার দুধারে অববাহিকা জুড়ে গড়ে ওঠে মানুষের বসতি, গাছপালা এই সব$ কিন্তু ৩০০ মেগাওয়াটের শক্তির খিদে তাতে মেটে না$ ফলে স্বাভাবিক গতিপথের মধ্যে পড়ে বাঁধ$ বাঁধ থেকে সরু তুলনামূলকভাবে অনেক সোজা পথে চালনা করা হয় সেই জলকে$ সেই জলের তোড়ে ঘোরে টারবাইন, তৈরি হয় বিদ্যুৎ$ এই নতুন গতিপথ তৈরি হয়েছে পাহাড় কেটে তার পেটের ভেতর দিয়ে, অনেকটা আমাদের মেট্রো রেলের মতো$ তাহলে দাঁড়ালো এই যে নদীর স্বাভাবিক গতিপথ গেল শুকিয়ে$ এবারে মেহেরদা প্রায় আর্তনাদ করে উঠলেন, ‘সেখানে তো লোক থাকে; সেখানেই তো লোক থাকে$ আরে যে কোনো প্রাণীই তো জলের অভাবে মরে যাবে তাহলে মানুষ বাঁচবে কী করে?’মেহেরদা ক্যাগের রিপোর্ট পড়ে চললেন “The physical verification of four out of five operational projects, showed that river-beds down stream had almost completely dried up, the water flow was down to a trickle, and extremely inadequate for the sustenance of ecology and nearby groundwater aquifers.”এরপরও আর কী বলার থাকতে পারে? এ তো সরকারি অডিট রিপোর্ট$
কিন্তু Diversion reach–এর খেলা এখানেই শেষ না$ প্লাবনের সময় যেমন হল এবারের উত্তরাখণ্ডের বিপর্যয়ে, নদী তো কথা শুনবে না$ সে তো বলবে না আমি কেবল ওই টানেলের মধ্য দিয়েই যাব$ টানেলতো ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে, তার ব্যবস্থা সব ভেঙে পড়েছে জলের প্রবল তোড়ে$ ফলে নদী তখন দুকূল ভাসিয়ে ফিরে যাবে তার স্বাভাবিক গতিপথে। মানে, মেহেরদা বললেন, ‘ওরা যখন জল পাবে না, তখন কিছুই পাবে না আর যখন পাবে তখন ভেসে যাবে, মরে যাবে। মরণ দু–দিকেই’$জিতেনদা বললেন, ‘মানে ওরা কোনোরকম সতর্ক হয়নি …।’ মেহেরদা বললেন, ‘বছর দুয়েক আগে আমি ওখানে গিয়েছিলাম, দেখেছি এসবই চলছে পুরোদমে। কোনো পরিবর্তন নেই’$ প্রসঙ্গত এই রিপোর্টটি ২০০৯ সালের$ সুতরাং আশা করা যায় ২ বছর আগে কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে জানতেন কিন্তু অন্য সমস্ত রিপোর্টের মতো এর বক্তব্যগুলিও রয়ে গেছিল গুরুত্বহীন সর্বগ্রাসী উন্নয়নের মরীচিকার সামনে$
ক্যাগের রিপোর্ট অনুসারে ২০০৯ সালে ৪২টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে, ২০৩টি নির্মীয়মান অবস্থায় এবং আরও বহু প্রকল্প পরিকল্পনা স্তরে ছিল$ ক্যাগের রিপোর্টেই বলা আছে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য$ টানেল তৈরি করতে মাটি তো খুঁড়তে হল, এবারে এই মাটি কোথায় যাবে? এত মাটি ফেলা হয়েছে কোথায়? কোথায় আবার, নদীতে, সহজ হিসাব$ মেহেরদা বললেন, ‘আমার বন্ধু বিনায়ক দত্তরায় ওখানে ছিল$ ও বলেছে ভাই আমি জানি বন্যা হত$ কিন্তু বন্যায় এত কাদা আসত না’ অর্থাৎ নদীর নাব্যতা, জলের চরিত্র এবং অববাহিকা অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ জলস্তর সবই গেল$
ক্যাগের রিপোর্টের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল গাছ লাগানোর হিসাব$ ৩৮% জলবিদ্যুৎ প্রকল্প যথেচ্ছ গাছ কেটেছে কিন্তু প্রায় একটাও গাছ লাগায়নি$
‘আমি যদি দড়ি দিয়ে তোমার মাথার ওপর একটা বড়ো পাথর ঝুলিয়ে দিই আর তারপর সেটা যদি তোমার মাথায় পড়ে তবে কি আমি বলব আমি তো দড়ি কাটিনি$ এতো ন্যাচারাল$ আরে ন্যাচারাল বলে চিৎকার করলেই তো হল না তার একটা মানে তো থাকতে হবে$ প্রকৃতির ছন্দকে তুমি যদি কেটে দাও তাহলে প্রকৃতি তো সেইভাবে আবার একটা ছন্দ খুঁজবেই$ সেটাকে যদি তুমি ন্যাচারাল বলো তো আমার আর কিছু বলার নেই$ তাহলে তো কিছুই করতে হবে না$ তাহলে আর ক্যাগ দিয়েই বা কী হবে বা কিছু দিয়েই কী হবে?’একদমে কথাগুলো বললেন মেহেরদা$
এখানে উঠল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট প্ল্যানের কথা$ ২০০৭ সালে একটা পরিকল্পনা করা হয়েছিল এধরনের বিপর্যয় কীভাবে মোকাবিলা করা হবে সে বিষয়ে$ যদিও সেটা ২০০৭ এর পর কেউ ছুঁয়েও দেখেনি$ ‘আরে, ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান থাকলেই তো হল না, সেটাকে কী করে ব্যবহার করতে হয় সেই জ্ঞানটাতো থাকার দরকার$ যেখানে বসু বিজ্ঞান মন্দিরের মতো জায়গাতে কোনোদিন আগুন লাগলে কী করতে হবে সে বিষয়ে কোনো হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় না সেখানে উত্তরাখণ্ডে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট প্ল্যানের কী দশা তা তো সহজেই অনুমান করা যায়$ কী করব আমি এই ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান নিয়ে? জাপানে জাপানি বাচ্চারা ভুমিকম্প দেখলে ঘাবড়ায় না, টেবিলের তলায় ঢুকে যায় কারন তাদের রিহার্সাল করানো হয়$ এখানে ওরকম কিছু কি কোনোদিনও ভাবা যায়?’ – মেহেরদার এই কথার আর কোনো জবাব আমাদের কাছে ছিল না$ মেহেরদাকে প্রশ্ন করলাম এটা নিয়ে কোনো পি আই এল ইত্যাদি করে কি কোনো লাভ আছে? মেহেরদা বললেন, ‘লাভ তো অবশ্যই আছে$ এমনকী পিআইএল সফল না হলেও লাভ আছে’$টেবিল চাপড়ে বললেন মেহেরদা, ‘আমার টাকা, কীভাবে খরচা হচ্ছে তা জানবার সম্পূর্ণ অধিকার আমার আছে’$
এত বড়ো মাপের বিপর্যয় ঘটে গেল তার একটা কারণ কি এই যে উত্তরাখণ্ডের নিজস্ব কোনো আবহাওয়ার পূর্বাভাষ নির্ণায়ক ব্যবস্থা ছিল না? উত্তরাখণ্ড নির্ভর করত দিল্লি, পাটনা, হরিয়ানার পূর্বাভাষের ওপর$ আগে থেকে কি কিছুই জানা যায়নি? কেউ কোনোরকম সতর্কবার্তা দেয়নি? প্রসঙ্গত আলোচনায় এল কাঠমাণ্ডুর রিপোর্টের কথা$ সেখানে বলা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী চেয়েছিলেন গোটা ঘটনাটা বেমালুম চেপে যেতে$ সে চেষ্টা অবশ্য সফল হয়নি$ ধ্বংসের বিশালতাই তার অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল$ কিন্তু রিপোর্ট যা পাওয়া গেছে তাতে দেখা গেছে পূর্বাভাষ ছিল$ তাকে বার বার রিভাইজ করা হয়েছিল বিপদসূচকের মাত্রা বাড়ানো হয়েছিল$ কিন্তু প্রশাসনিক স্তরে, জেলাশাসক বা অন্য আমলারা কিছুই করেনি বা তারা বুঝেই উঠতে পারেনি কী করা উচিত$ মেহেরদা বললেন ‘প্রশাসনিক স্তরে প্রশাসকরা হল বাবু, বাবুরা কী করে আর না করে তা তো আমরা জানি, নয় কি?’
নেপালের রিপোর্ট প্রসঙ্গে জিতেনদা বললেন, ‘বেশিরভাগ মানুষ যারা মারা গেছে তারা ছিল নেপালি$ তারা ছিল শ্রমিক, অসংগঠিত দিনমজুর যারা পাহাড়ে মুটিয়ার কাজ করে$ এরা মারা যাওয়াতে প্রথমদিকে প্রশাসন খুব একটা নড়েচড়ে বসেনি বা গ্রাহ্য করেনি$ নড়াচড়া শুরু হয় যখন পর্যটকরা মারা যেতে শুরু করে$ তার আগের কয়েক হাজার মুটিয়ার মৃত্যুর হিসাব রাখতে কেউই উৎসাহী নয়’$
গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের প্রসঙ্গ ঘুরে ফিরে আবার আসছিল$ এর সাথেই আসছিল বাস্তবতা$ ভারতবর্ষ বা উত্তরাখণ্ড আমেরিকা নয়$ এখানে গাড়ি–বাড়ি কমাও বলা কিছুটা অর্থহীনও বটে$ কিন্তু প্লাস্টিক ব্যবহার তো বন্ধ করা যায়$ ভারত সরকার প্লাস্টিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, একটু মোটা প্লাস্টিক ব্যবহার করতে বলেছে, কিন্তু একেবারে নিষিদ্ধ করেনি$ ফলে গৌরীকুণ্ডে যাবার পথে পুণ্যার্থী ট্যুরিস্টরা কিনে নিয়ে যাচ্ছে ২০ টাকার প্লাস্টিক রেনকোট আর নেমে আসার সময় তা বিসর্জন দিয়ে আসছে গৌরীকুণ্ডে$ প্লাস্টিককে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা প্রসঙ্গে মেহেরদা বলছিলেন, ‘বাংলাদেশ করেছে, আয়ার্ল্যান্ড করেছে, আমরা কেন করতে পারব না?’
তথাকথিত উন্নয়নের বিরোধিতার সাথেসাথে উত্তরাখণ্ডের অর্থনীতির প্রশ্নটিও অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত$ তবে কি ট্যুরিজম পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে হবে? ‘তা কেন হবে?’বললেন মেহেরদা$ ট্যুরিজমকে তো নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে$ হজে কি তুমি যেতে চাইলেই যেতে পারো? একটা নিয়ন্ত্রণ তো আনা সম্ভব আর সেটুকু করা গেলেই অনেকটা সমস্যা কমানো যেতে পারে$ গাড়ি বা হেলিকপ্টার করে পয়সা খরচ করলেই গাদা গাদা দূষণ সৃষ্টি করে যখন তখন পৌছে যাবার প্রবনতা এবং সূযোগ বন্ধ করতে হবে$ এতে দুদিকেই লাভ — উত্তরাখণ্ড বাঁচবে আর বাঁচবে মহার্ঘ জৈব তেল, পেট্রোল$
সময় শেষ হয়ে আসছে$ মেহেরদা ডাকলেন কম্পিউটারের সামনে, একটা ছবি দেখাতে (চিত্র ২)$
হাইতি আর ডোমিনিকান রিপাবলিকের সীমানার ছবি$ ইতিহাস বলে স্পেন আর ফ্রান্সের উপনিবেশ ছিল এই দুই দেশে। উন্নয়ন আর সাহেবদের রাজত্বের দাপটে হাইতিকে চিনতে আর অসুবিধা নেই$ যে জায়গাটা ন্যাড়া, লাল, রুক্ষ সেটা হাইতি$ এখানে আর একটা ভূমিকম্প হলে বা বিপর্যয় হলে কী হবে? কী হতে পারে? প্রশ্নটা হল আমরা কি উত্তরাখণ্ডকে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসিয়ে হাইতি বানাতে চাই?
ব্রিটিশ শাসনের আগে ভারতে রাজাদের, নবাবদের রাজত্ব ছিল$ তারা অত্যাচার করেছে$ ভয়ঙ্করভাবেই করেছে কিন্তু তাদের সাথে ব্রিটিশ শাসকদের একটা বড়ো পার্থক্য ছিল$ রাজারা কখনো প্রজাদের বাধ্য করেনি তার তৈরি মাল কিনতে$ তখন ভারত আর চীন ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে সমৃদ্ধিশালী দেশ$ সেসব ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে আর আজ তুমি বলছ ভারত অনুন্নত, গরিব আর তার উন্নয়ন দরকার!
মেহেরদা বললেন, ‘পুনর্গঠন? কীসের পু্নর্গঠন? ভিখারি বানাবার তোড়জোড়, যেমন হাইতি? আলেকজান্ডার বা অন্য যে কোনো সম্রাট মাটির নীচে থাকা সম্পদের দিকে, প্রকৃতির দিকে হাত বাড়ায়নি$ সে হাত বাড়িয়েছে এই সময়, এই সভ্যতা’$
কথাবার্তা শেষ$ এবার ফিরে গিয়ে রিপোর্ট লেখার পালা$ কী লিখব? সভ্যতা? ডেভেলপমেন্ট? মেহেরদা বলছিলেন গ্রোথ আর ডেভেলপমেন্ট এক নয়$ তুমি গায়ে হাতে পায়ে গ্রো করতে পারো কিন্তু তার মানেই কি তুমি ডেভেলপ করলে? জানি না, উত্তরটা আর সবার মতোই আমরাও খুঁজছি আর সেই মন্থনের রিপোর্ট লেখা হচ্ছে এবারের মন্থনে$