আমি নীনা, ইইভিএফএএম–এর সেক্রেটারি। ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর আমাদের পরিবারের দুপুরের খাওয়াদাওয়ার পরে আমার স্বামী নঙমেইথেম মাইকেল তাঁর এক বন্ধুর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। সেই বন্ধুর বাবার শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠানের আয়োজনে সাহায্য করার দরকার ছিল। সেখানে দুপুর তিনটে নাগাদ তাঁর কাছে একটা ফোন এসেছিল। তিনি বেরিয়ে গিয়েছিলেন। ৩টে ৩২ মিনিটে আমি ওঁর কাছ থেকে একটা ফোন পেলাম যে তাঁকে সন্দেহ করা হচ্ছে, আমি যেন ওঁর বোনকে ঘটনাটা জানাই। বোনের সঙ্গে পুলিশের ভালো যোগাযোগ ছিল, তাতে ওঁর ছাড়া পেতে সুবিধা হবে। আমি ঘটনাটা বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। তাই নিশ্চিত হওয়ার জন্য ওঁকে আবার ফোন করলাম। কিন্তু এবার তিনি ফোন ওঠালেন না। ফোনটা অন্য একজন তুললেন। যখন আমি তাঁকে আমার স্বামীর কথা জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি জানালেন, আমার স্বামী বাথরুমে গেছেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনারা এখন কোথায় আছেন? তিনি জবাব দিলেন, ওঁরা আমাদের বাড়ির কাছেই আছেন।
আমি ওঁর বোন আর পরিবারের সকলকে জানালাম। তাঁরা বিভিন্ন পুলিশ স্টেশনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেন। কিন্তু কোনো লাভ হল না। রাত ন–টার সময় আইএসটিভি–র সংবাদে আমি আমার স্বামীর নিথর দেহটা দেখতে পেলাম; ওঁকে সংঘর্ষে নিহত একজন ‘মিলিট্যান্ট’ বা ‘টেররিস্ট’ হিসেবে দেখানো হল, ওঁর দেহের পাশে নাকি একটা হ্যান্ড গ্রেনেড পাওয়া গেছে। আমি দেখে হতবাক হয়ে গেলাম, কীভাবে আমার স্বামীকে ‘টেররিস্ট’ ছাপ দিয়ে মেরে ফেলা হল! …
মণিপুরে অবৈধভাবে হত্যা হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারবর্গের একটি সংস্থা ইইভিএফএএম (একস্ট্রা–জুডিসিয়াল একজিকিউশন ভিক্টিম ফ্যামিলিজ অ্যাসোসিয়েশন মণিপুর) এবং অন্যান্যদের ২০১২ সালের একটি আবেদনের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট ৪ জানুয়ারি ২০১৩ একটি কমিশন গঠন করে। এই কমিশনে নিযুক্ত চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারক এন সন্তোষ হেগড়ে এবং দুই সদস্য জে এম লিংদো ও ডঃ অজয় কুমার সিং–কে ১২ সপ্তাহ সময় দেওয়া হয় সম্পূর্ণ তদন্ত করে রিপোর্ট পেশ করার জন্য। যদিও আবেদনকারীরা ভুয়ো সংঘর্ষে ১৫০০–র বেশি হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্ত সুপ্রিম কোর্টে তুলে ধরেছিলেন, কিন্তু ২০০৯–২০১০ সালের প্রথম ৬টি ঘটনা নিয়ে কমিশনকে তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কমিশন ৩০ মার্চ রিপোর্ট পেশ করে। এতে প্রমাণিত হয়, এই ৬টি ঘটনায় মৃত আজাদ খান, খাম্বঙমায়ুম অর্সনজিত, নামেইরাকপাম গোবিন মেইতেই, নামেইরাকপাম নোবো মেইতেই, এলাঙবাম কিরণজিত সিং, চোঙথাম উমাকান্ত এবং আকোইজাম প্রিয়ব্রত কোনো সংঘর্ষে যুক্ত ছিলেন না এবং তাঁরা আদৌ আত্মরক্ষার জন্য (নিরাপত্তা বাহিনীর) কারোর দ্বারা খুন হননি, অর্থাৎ এঁদের একতরফাভাবে হত্যা করা হয়েছে।
সুপারিশসমূহ
-
এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে মণিপুর রাজ্যে বিদ্রোহ (ইনসার্জেন্সি) রয়েছে। কিন্তু দশকের পর দশক ধরে ‘আর্ম্ড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট’AFSPA ব্যবহার করে যাওয়ার তেমন কোনো প্রভাব এই পরিস্থিতির ওপর পড়েনি। অন্যদিকে, ৬টি ক্ষেত্রে প্রকৃতপক্ষে কোনো সংঘর্ষ ঘটেনি। এগুলি AFSPA–র অপব্যবহারের স্পষ্ট মর্মান্তিক নজির।
-
ভারতবর্ষে আজকে সন্ত্রাসবাদ যত না আদর্শ–কেন্দ্রিক, তার চেয়ে বেশি বেকারত্বের ফল। যদিও জঙ্গিরা একটা আদর্শের রঙ এতে চাপানোর চেষ্টা করে। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তি সামগ্রিক বেকারত্ব না কমিয়ে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং বাজার বৈষম্যকে এক তিক্ত পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে। বরং সন্ত্রাসবাদ গুপ্ত–গোষ্ঠীগুলোতে বেশ কিছু ছেলেপুলেকে নিয়োজিত করেছে। যুবসমাজের অস্থিরতা ক্রমবর্ধমান। একমাত্র এক সচল প্রশাসন এই বিষয়কে নিজের কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত করে কিছুটা সামাজিক স্থিতি আশা করতে পারে।
-
জীবন রেড্ডি কমিটিকে AFSPA–র ফলাফলের পর্যালোচনা করতে দেওয়া হয়েছিল। সেই কমিটি শুনানির পর কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে যে রিপোর্ট পেশ করে, তাতে বলা হয়েছিল, AFSPAহল ‘দমনের প্রতীক, ঘৃণার সামগ্রী এবং বিভেদ ও স্বেচ্ছাচারের হাতিয়ার’। এখনকার এই কমিশন সেই রিপোর্ট অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে খতিয়ে দেখেছে এবং শ্রদ্ধাশীলভাবে তার সঙ্গে ঐকমত্য প্রকাশ করছে।
-
AFSPAবা UAPA (আনলফুল অ্যাক্টিভিটিজ প্রিভেনশন অ্যাক্ট) ছাড়াও মণিপুরে যত শীঘ্র সম্ভব স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরে আসা দরকার। জনসাধারণের মধ্যে শত্রুতা ও হিংসা যথেষ্ট হয়েছে। এই রাজ্যে নাগরিক সমাজের উপস্থিতি টের পাওয়া যায় এবং এর ফলে মণিপুরে সামাজিক সচেতনতা বেড়েছে দেশের গড়পড়তা মাত্রার চেয়ে বেশি। এটাই উপযুক্ত সময় যখন AFSPA–র ৩নং ধারা মোতাবেক আরও বেশি বেশি এলাকা থেকে AFSPAতুলে নেওয়া যেতে পারে। একই সঙ্গে ১৪৪ ধারাও ক্রমান্বয়ে তুলে নেওয়া যায়। যদি কোনো পর্যায়ে অবস্থার অবনতি ঘটে, তখন সরকারের হাতে বিষয়টা পুনর্বিবেচনা করার সুযোগ রয়েছে। AFSPA–র মেয়াদ বাড়ানোর জন্য অবশ্যই সংবিধানের ৩৫৬(৩) ধারার সঙ্গে তুলনা টেনে রাজ্য বিধানসভায় প্রস্তাব রাখা যেতে পারে।
-
‘নাগা পিপল্স মুভমেন্ট ফর হিউম্যান রাইট্স’–এর মামলার ক্ষেত্রে মাননীয় সুপ্রিম কোর্ট সেনাবাহিনীর সদরদপ্তরের করণীয় ও করণীয়–নয় বিষয়গুলো স্থির করে দিয়েছে। এর সামান্য লঙ্ঘন আর্মি অ্যাক্ট অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ। এটা সর্বক্ষেত্রেই বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে।
-
মণিপুরের সরকারি প্রশাসনকে আরও সক্রিয় ও সহানুভূতিশীল হতে হবে। পুলিশকে আরও জনসাধারণের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন হতে হবে। এটা সফল হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে এবং জনসাধারণের আস্থা অর্জন করা যাবে। এটা যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে করা হয়নি। আমাদের নজরে এসেছে, রাজ্যের আইএএস ও আইপিএস অফিসারেরা জনসাধারণ থেকে বিচ্ছিন্ন।
-
মণিপুর পুলিশের কমান্ডো বাহিনী CDO–কে ইচ্ছেমতো জনসাধারণকে সন্ত্রস্ত করতে দেওয়া যায় না। তাদের ভূমিকা, দায়িত্ব এবং কর্তব্যকে স্পষ্টভাবে নির্ধারিত করে দেওয়া দরকার। জেলার সুপারিন্টেনডেন্ট ও পুলিশের উর্ধতনদের এদের ওপর তদারকির ব্যবস্থা দরকার। বর্তমানে এটা ঘটছে না।
-
‘প্রকাশ সিং বনাম ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া (২০০৬)’মামলায় মাননীয় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ২০০৭ সালে মণিপুরের বহু জেলায় সরকার ‘ডিস্ট্রিক্ট পুলিশ কমপ্লেন্টস অথরিটি’ গঠন করেছিল। এতে সুপারিশ করা হয়েছিল, এই ডিস্ট্রিক্ট পুলিশ কমপ্লেন্টস অথরিটির সঙ্গে প্রত্যেক জেলায় একজন করে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি থাকবে। এই অথরিটিকে কার্যকর করে তোলা দরকার এবং তা ব্যাপক প্রচার মারফত জনসমক্ষে নিয়ে আসা দরকার। বর্তমানে এই অথরিটি পুলিশের খারাপ আচরণ, কেস নথিভুক্ত না করা ইত্যাদি দেখছে। আমরা সুপারিশ করছি, নিখোঁজ মানুষের ব্যাপারে পুলিশ, সেনা ও অন্যান্য আধাসেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের অভিযোগ খতিয়ে দেখবে এই অথরিটি। যদি অভিযোগের সত্যতা থাকে, তাহলে অথরিটি সেই জেলার সুপারিন্টেনডেন্ট অব পুলিশ অথবা ভারত সরকারের কমান্ডান্ট অব দি আর্মড ফোর্সের কাছে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বলবে। সরকার সকলকে এই কাজে সহযোগিতা করার জন্য নির্দেশ দেবে। আলাদা কোনো গ্রিভ্যান্স সেল খোলার দরকার নেই। রাজ্য স্তরে এই অথরিটি গঠন করতে হবে, যেখানে কমপক্ষে একজন নাগরিক সমাজের সদস্য থাকবে এবং তারা তিনমাস অন্তর জেলা স্তরের অথরিটির কাজের পর্যালোচনা করবে।
-
ডেপুটি সুপারিন্টেনডেন্ট অব পুলিশরা কমিশনের কাছে জানায়, তাদের নিজেদের নিয়মিত কাজের বাইরে UAPA–র অন্তর্ভুক্ত ৫০০–৬০০ কেসের তদন্ত করতে হয়েছে। তদন্ত করতে গিয়ে দেখা গেছে, সমস্ত সংঘর্ষের কেসেই এফআইআর–এ UAPA–র একটি বা দুটি ধারা যুক্ত হয়েছে। ওই ডেপুটি সুপারিন্টেনডেন্টরা এই সংঘর্ষের মামলাগুলোর অগ্রাধিকার দেওয়ার মতো অবস্থায় ছিলেন না। যে ৬টি মামলার জন্য কমিশনকে নিযুক্ত করা হয়েছিল, সেগুলি তদন্তের জন্য বছরের পর বছর ধরে পড়েছিল।
-
মণিপুরে ২৭১৩টি UAPA–র আওতায় থাকা মামলায় কেবলমাত্র ১৩টির চার্জশিট তৈরি হয়েছে। বাকিগুলো পড়ে রয়েছে।
-
কমিশনের সুপারিশ, সংঘর্ষের যে ঘটনাগুলিতে মৃত্যু হয়েছে, সেগুলি সিআইডি–কে দিয়ে তদন্ত করা হোক, কিন্তু ডেপুটি বা অ্যাসিস্টেন্ট স্তরের অফিসারের নিচে কাউকে দিয়ে নয়। এই কাজের জন্য ছ–মাসের মধ্যে সিআইডি–কে যথাযথ শক্তিশালী করে তুলতে হবে।
-
UAPA–র সমস্ত মামলা স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম গঠন করে তদন্ত করতে হবে। এর ব্যবস্থাপনা ও ফোন নাম্বার ব্যাপকভাবে প্রচার করে জনসাধারণকে জানাতে হবে।
-
প্রতি মাসে ডিআইজি স্তরের নিচে নয় এমন একজন অফিসারকে দিয়ে সংঘর্ষের ঘটনাগুলির তদন্তের পর্যালোচনা করতে হবে।
-
মণিপুরের ডিজিপি–কে দিয়ে পরিপূরক বিস্তারিত নির্দেশ দিতে হবে যাতে এই তদন্তের কোনো ত্রুটি না হয় এবং তদন্তের আধুনিক ব্যবস্থা প্রয়োগ করা হয়।
-
সংঘর্ষের যে ঘটনাগুলিতে মৃত্যু হয়েছে, সেগুলি প্রতি তিনমাস অন্তর একটি কমিটিকে দিয়ে পর্যালোচনা করতে হবে, তার দায়িত্বে থাকবেন রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের প্রধান, সঙ্গে থাকবেন প্রিন্সিপাল হোম সেক্রেটারি এবং রাজ্যের ডিজি। এই পর্যালোচনার উদ্দেশ্য হবে, তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার দরকার আছে কিনা তা দেখা।
-
কমিশন সুপারিশ করছে, সংঘর্ষের যে ঘটনাগুলিতে মৃত্যু হয়েছে তা একটি স্পেশাল কোর্ট দিয়ে বিচার করানো হোক। বিচারাধীন মামলার সংখ্যা অনুযায়ী এই কোর্টের সংখ্যা রাজ্য সরকার ও হাইকোর্ট স্থির করবে। এর উদ্দেশ্য হবে মামলাগুলির নিষ্পত্তি ঘটানো।
-
তদন্ত করে কমিশন দেখেছে, পুলিশ নিজেদের কার্যকলাপ ও তদন্তের সময় গুরুতর গণ্ডগোল করেছে। কমিশন তাই নিম্নলিখিত পদক্ষেপের সুপারিশ করছে : ক) পুলিশ যে গুলিগুলো ছুঁড়েছে এবং অপরাধের ঘটনাস্থল থেকে সেগুলোর যে ফাঁকা খোলগুলো পাওয়া গেছে, তার মধ্যে বিস্তর ফারাক। মণিপুর পুলিশের ডিজি–র অস্ত্রশস্ত্র সংক্রান্ত অনুমোদন, ব্যবহার ও হিসেবপত্রের ব্যাপারে স্ট্যান্ডিং অর্ডার রয়েছে। এইসব নির্দেশ মানা হয়নি। এব্যাপারে গুরুতর দুর্নীতি হতে পারে। খ) অপারেশনের পরে গুলির ফাঁকা খোলগুলোর জন্য ঘটনাস্থলে পুলিশ কোনো অনুসন্ধান করেনি। এতে তদন্তে ত্রুটি হতে পারে। গ) বহুক্ষেত্রে ঘটনার বেশ কিছুদিন পরে পোস্টমর্টেম করা হয়েছে। মৃতদেহের দেহগত পরিবর্তনের ফলে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সংঘর্ষের ঘটনার পর যত দ্রুত সম্ভব পোস্টমর্টেম করা উচিত। ঘ) সংঘর্ষের ঘটনায় মৃতদেহের পোস্টমর্টেমের ভিডিও করা উচিত। ঙ) পোস্টমর্টেমের সময় মৃতের হাত ধোওয়া উচিত এবং তা ফরেনসিক বিশ্লেষণের জন্য পাঠানো উচিত। এটা জরুরি, কারণ বহুক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনী দাবি করেছে, মৃত ব্যক্তি জীবিতাবস্থায় গুলি চালিয়েছে। চ) তদন্ত চলাকালীন মৃতের হাতের ছাপ যথাযথ আইডিন্টিফিকেশনের জন্য এবং মৃতের দ্বারা ব্যবহৃত অস্ত্রের ওপর হাতের ছাপের সঙ্গে মিলিয়ে দেখার জন্য নেওয়া দরকার। ছ) বাজেয়াপ্ত বস্তুগুলো ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে অনেক দেরি করে পাঠানো হয়েছে, এমনকী কয়েক বছর পার করে। বাজেয়াপ্ত করার এক সপ্তাহের মধ্যে তা ওই ল্যাবরেটরিতে পাঠানো উচিত এবং সেখানে দ্রুত পরীক্ষা করে ইনভেস্টিগেটিং অফিসারের কাছে রিপোর্ট পাঠানো উচিত।
-
অসামরিক প্রশাসনের সাহায্যে সেনা মোতায়েনের ক্ষেত্রে ‘নাগা পিপ্লস মুভমেন্ট ফর হিউম্যান রাইট্স’–এর মামলায় মাননীয় সুপ্রিম কোর্ট তাদের রায়ের ২৪, ২৫ ও ২৬ প্যারায় কিছু গাইডলাইন তৈরি করে দিয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীকে এগুলো যথাযথ মেনে চলতে হবে।
-
এটা কমিশনের কাছে স্পষ্ট যে মণিপুর রাজ্যের পুলিশকে যতখানি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়, তার তুলনায় তাদের শক্তি অপর্যাপ্ত। তাই এটা জোরালোভাবে সুপারিশ করা হচ্ছে, মণিপুর সরকার একটা পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মাধ্যমে তার অসামরিক পুলিশের শক্তি, সামর্থ্য ও প্রশিক্ষণ গড়ে তুলুক যাতে অসামরিক ক্ষমতার সাহায্যের জন্য কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করা সম্পূর্ণ বন্ধ হতে পারে। কেন্দ্রীয় সরকারকে এই কাজে সবদিক থেকে সাহায্য করতে হবে।
-
বর্তমানে আসাম রাইফেল্স–এর ৬০ কোম্পানি, সিআরপিএফ–এর ৩৭ কোম্পানি এবং বিএসএফ–এর ১২ কোম্পানি মণিপুরে মোতায়েন রয়েছে। সংঘর্ষ প্রতিরোধের কাজে সিআরপিএফ ও বিএসএফ–কে ব্যবহার করা হয় না।
-
তদন্ত চলাকালীন এটা নজরে আনা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ে রয়েছে যে AFSPA–র ৬নং ধারা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকারের আগাম অনুমোদন ছাড়া আসাম রাইফেল্সের বাহিনীর বিরুদ্ধে কোনো চার্জশিট ফাইল করা যাবে না। কিন্তু নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ কর্তৃপক্ষ তাদের ওপর এফআইআর নিয়ে তদন্ত করতে পারে। এই বিষয়গুলো আসাম রাইফেল্স, মণিপুর পুলিশ ও রাজ্যের মানুষকে জানানো দরকার, নচেৎ AFSPA–র ৬নং ধারার নাম করে প্রশাসন নানা অনিয়ম করতে পারে।
-
কমিশন সুপারিশ করছে যে, AFSPA–র ৬নং ধারার অধীনে অর্ডার দিতে কেন্দ্রীয় সরকার একটা সময়সীমা মেনে চলবে, সেটা অভিযোগ রুজু করার অনুরোধ গ্রহণ করার পর তিনমাস হতে পারে।
-
অনুবাদক : জিতেন নন্দী