নিয়ন্ত্রণী সমাজ : উপসংহারের পরের কথা

জিল দেল্যুজ

১. ঐতিহাসিক
ফুকো অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীতে নিয়মানুবর্তী সমাজের উপস্থিতি চিহ্নিত করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর গোড়ায় সেগুলি তাদের শিখরে পৌঁছেছিল। সেগুলি এগিয়ে যাচ্ছিল বিশালাকার পরিবেষ্টনগুলির এক সংগঠনের দিকে। ব্যক্তি সেখানে অবিরত এক পরিবেষ্টন থেকে অপর একটিতে যেত, প্রতিটি পরিবেষ্টনের ছিল নিজস্ব কিছু নিয়ম : প্রথমে পরিবারে, তারপর স্কুলে (‘তুমি আর নিজের বাড়িতে নেই’), তারপর ব্যারাকে (‘তুমি আর স্কুলে নও’), তারপর কারখানায়, মাঝেমাঝে হাসপাতালে, হয়তো কখনো কারাগারে, যা নিজেই চমৎকার এক পরিবেষ্টন। কারাগারই হল পরিবেষ্টনের আদর্শ মডেল : রোসেলিনির ইউরোপা’৫১-এর নায়িকা কিছু শ্রমিককে দেখে চমকে গিয়ে বলেছিলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম সাজাপ্রাপ্ত কিছু লোক দেখছি!’ [অনুবাদকের নোট : ১৯৫২ সালে ইতালিয়ান চলচিত্র পরিচালক রবার্তো রোসেলিনির সিনেমা ইউরোপা’৫১ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ইউরোপের একটি চিত্রায়ণ। নায়িকা রোম শহরের এক ধনী ঘরের বউ, একমাত্র সন্তানের আকস্মিক মৃত্যুর পর সে এক কমিউনিস্ট বন্ধুর পাল্লায় পড়ে রোমের গরীব পাড়ায় যাতায়াত শুরু করে। সেই পাড়ার এক ছয় সন্তানের মা-কে একটি কারখানায় কাজ পাইয়ে দিতে গিয়ে সে প্রত্যক্ষ করে কারখানা, শ্রমিক।]
ফুকো চমৎকারভাবে পরিবেষ্টনের এই আদর্শ প্রকল্পটি ব্যাখ্যা করেছিলেন, যা বিশেষভাবে কারখানায় দেখা যায় : এক জায়গায় জড়ো করা; জায়গাটাতে ভালোভাবে ছড়িয়ে দেওয়া; সময়ে সময়ে আদেশ করা; ওই স্থান-কালে একটা উৎপাদিকা শক্তি গড়ে তোলা, যার ফলাফল তার অংশগুলির শক্তির সমষ্টির তুলনায় বেশি হয়। কিন্তু ফুকো এই প্রকল্পের সার কথাটিও জানতেন : এটা এসেছে এক সার্বভৌম সমাজের পরে, যার লক্ষ্য এবং কার্যপ্রণালী ছিল সম্পূর্ণ আলাদা (উৎপাদন সংগঠিত না করে তার ওপর কর চাপানো; জীবন কীভাবে চলবে তা ঠিক না করে মৃত্যুর আইন জারি করা)। আস্তে আস্তে এই অতিক্রমণ ঘটেছে, এবং নেপোলিয়নকেই মনে হয় এই এক সমাজ থেকে অন্য সমাজে ব্যাপক রূপান্তরের কারক। কিন্তু এই নিয়মানুবর্তিতা এবং তার প্রণালী একটা সংকটে পড়ল, যখন নয়া শক্তিগুলি জিইয়ে উঠল। এই নয়া শক্তিগুলি ক্রমান্বয়ে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছিল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তা গতি পেল : নিয়মানুবর্তী সমাজ, যেখানে আমরা খুব একটা আর ছিলামও না, সেই সমাজে আর আমরা একেবারেই থাকলাম না।

বিস্তারিত পড়ুন

একটি রাজনৈতিক ফাঁসি

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক নির্মালাংশু মুখার্জীর প্রবন্ধ A Political Hangingএর অনুবাদ তাঁর অনুমতিক্রমে প্রকাশিত হল। বঙ্গানুবাদ করেছেন তমাল ভৌমিক।

এক

তিহার জেলে গোপনে আফজল গুরুর ফাঁসি ও কবর দেওয়ার পর থেকে যেভাবে এই প্রাণদণ্ডের ঘটনা হয়েছে তার জন্য সরকারকে অনেক লেখকই সঠিকভাবে দোষারোপ করছেন। যাই হোক না কেন, একবার যখন রাষ্ট্র একজনকে ফাঁসি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন সেই হত্যাকাণ্ড ণ্ণস্বচ্ছতার সঙ্গে ণ্ণমর্যাদাপূর্ণভাবে হল কিনা সেটা মূলত একটা নন্দনতাত্ত্বিক প্রসঙ্গ। কিন্তু হত্যাকাণ্ড শুরু হল যেপ্রক্রিয়া থেকে তা খুব জরুরি জ্ঞানতাত্ত্বিক আলোচনার বিষয়।

যে সময়ে ও যেভাবে এই ফাঁসিটা দেওয়া হল তা নিঃসন্দেহে সরকারের রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি প্রকট করে তোলে। গ্রেপ্তার হওয়ার শুরু থেকে ক্ষমাভিক্ষার আবেদন প্রত্যাখ্যান পর্যন্ত আফজল গুরুর কেসের সমস্ত ঘটনাকে যদি আমরা খেয়াল করি তাহলে এই রাজনৈতিক বিবেচনাপ্রসূত দুরভিসন্ধির ব্যাপারটা আরও পরিষ্কার হয়ে ওঠে। রাষ্ট্রপতি ক্ষমাভিক্ষার আবেদন প্রত্যাখ্যান করার মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে তাঁর ফাঁসি হয়ে যাওয়াটা ওই রাজনৈতিক প্রক্রিয়ারই অবশ্যম্ভাবী পরিসমাপ্তি।

মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণের দুটি অংশ আছে। প্রথম অংশটা হল : ভারতের সুপ্রিম কোর্টে প্রাণদণ্ড ঘোষণা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাওয়া; পরের অংশ হল : ভারতীয় সংবিধানের ৭২()(সি) ধারা অনুসারে তা প্রেসিডেন্টের এক্তিয়ারে চলে যাওয়া। আমার মতে আফজল গুরুর চূড়ান্ত ঘোষণার পিছনে বিদ্বেষপূর্ণ রাজনৈতিক মনোভাব একটা বিরাট ভূমিকা নিয়েছিল। রাজনৈতিক প্রয়োজনে আফজল গুরুকে হত্যা করা দরকার ছিল, তাই এই প্রাণদণ্ড। কিছু লেখক, আমিও তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত, খানিক আন্দাজে এই সম্ভাবনার কথা বলেছিলেন। এখন আমার মনে হচ্ছে এই ভাবনাটা আরও খুঁটিয়ে দেখা যায়। সুপ্রিম কোর্টে আফজলের পক্ষের উকিল প্রবীণ আইনজীবী সুশীল কুমার যে দুটো সাক্ষাৎকার দিয়েছেন সেখান থেকেই শুরু করা যায়। আসামী পক্ষের উকিল হিসেবে তিনি এই কেসটাকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন এবং তাঁর মতে এই বিচারটা একদমই গ্রহণ করা যায় না। কেন, তা দেখাটাই গুরুত্বপূর্ণ।

আইনিবিচারের দিক থেকে দেখলে মূল কথাটা হল এই। এমনকী যেদিন আফজল গুরুর ফাঁসি হয় সেদিনও সুশীল কুমার এই কথাটাই ভেবেছেন যে বিশেষভাবে সন্ত্রাসীদের কেসে সিদ্ধান্ত টানা হয় স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে; কারণ সন্ত্রাসবাদীদের মূল পরিকল্পনা ও সংগঠন সব সময়েই রহস্য দিয়ে ঢাকা। তাই এই কেসগুলোকে পোক্ত করতে স্বীকারোক্তি সঠিক প্রমাণ করার জন্য পারিপার্শ্বিক বিষয়গুলোকে সাক্ষ্য হিসেবে দাঁড় করানো হয়। আবার পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যপ্রমাণও দাঁড়িয়ে থাকে স্বীকারোক্তির জোরে। তাতে করে বিচারব্যবস্থার সামনে হাজির করা তথ্যসাবুদে যে কারচুপি করা হয়নি তা বোঝানো যায়।

বিস্তারিত পড়ুন

গেরস্থের ফোল্ডার

শাকিল মহিনউদ্দিন

পরপর স্বপ্নের অপূরণ কেড়ে নিয়েছে জীবনীশক্তি, তাই কেমন যেন একতেলে, আত্মভোলা। প্রশ্ন শুনলেই হাসি পায়, মন হেসে লুটোপুটি খায়, অবুঝ মনটা মাঝেমধ্যে ভুল বোঝে, অকাজ করে বসে নিষ্পাপ হাসি দিয়ে বোঝাতে চায়, কী করব, মেয়েমানুষ আমরা, অতশত কী আর জানি?খোঁজ রাখে না পৃথিবীর আহ্নিকগতির, রাজার পালা বদলে মাথা ঘামায় না, কসমেটিক্‌স বোঝে না, তাই সাজগোজের বাহার নেই, জন্মভূমির কথা বললে শুধু ঘরকে দেখায় কিন্তু ডাক দিলেই যাই গো বাবু সাড়া দেয়।
বিস্তারিত পড়ুন

বাঁধ ভেঙে দাও, ভাঙো!

তিস্তা নদীবাঁধ ও জলবন্টন নিয়ে সাম্প্রতিক এক আলোচনায় বিজ্ঞানী সমর বাগচি একটি প্রশ্ন তোলেন, ইউরোপ আমেরিকাতে প্রচুর বাঁধ ডিকমিশনিং হচ্ছে বছর বছর$ ভারতবর্ষে একটাও বাঁধ ভাঙা হয়েছে কি?সেরকম হয়েছে বলে আমার জানা নেই$আমি ভাবছি, রবীন্দ্রনাথ কত দিন আগে বাঁধ ভাঙার কথা লিখে গেছেন মুক্তধারাতে$ সেখানে শিবতরাইয়ের চাষিদের কথা যা বলা হয়েছে, তা আজকের চাষিদেরও সমস্যা$

এ প্রশ্ন উঠেছিল সেদিন। কারণ আলোচনায় দেখা যাচ্ছিল, ভারত ও বাংলাদেশ দুদেশেরই দেশপ্রেমিক সরকার গ্রামের মানুষকে, বিশেষত বাণিজ্যিক বোরো চাষে নিযুক্ত চাষিদের তিস্তা ব্যারাজ থেকে চাষের জল দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং প্রতারিতও করেছে। কিন্তু তিস্তা নদীর স্বাভাবিক প্রবাহকে বাধামুক্ত করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। ইউরোপআমেরিকার যেসব দেশ আমাদের উন্নয়নএর এই পথে উজ্জীবিত করেছিল, তারা ইতিমধ্যে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহকে উন্মুক্ত করার জন্য বাঁধ ভাঙার কাজ শুরু করেছে। বোরো চাষের মজাটা টের পাচ্ছে আমাদের পাঞ্জাব বা পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের চাষিরাও। কিন্তু কৃত্রিমভাবে নদীকে আটকে বা মাটির তলা থেকে যথেচ্ছভাবে জল তুলে নিয়ে চাষ করে উন্নতি করার বিপদ এখনও সকলের কাছে স্পষ্ট হয়নি।

তাই দুদেশের রাজনৈতিক নেতারা এখনও উন্নয়নএর গল্প বলে মানুষকে প্ররোচিত করতে পিছপা নয়। তিস্তা জলবন্টন তাই আজও রাজনীতির ইস্যু হয়ে রয়েছে। আমরা এবারের সংখ্যায় এই বিষয়টাতে কিছুটা কথাবার্তা বলতে চেয়েছি।

একই সঙ্গে উত্তরাখণ্ডের বিপর্যয় আমাদের আলোচনায় উঠে এসেছে। উত্তরাখণ্ড চোখে আঙুল তুলে দেখিয়ে দিয়েছে, উন্নয়নএর নামে শত শত ড্যাম আর জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ পাহাড়ের প্রকৃতিকে কীরকম নির্মমভাবে ধ্বংস করে চলেছে।

সময় এসেছে বাঁধ ভাঙার। প্রথমত ভাঙতে হবে আমাদের মনের বাঁধ। আধুনিক শিক্ষার যে প্রলেপটা আমাদের মনকে চোখের সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনাকেও দেখতে দেয় না, আমাদের অনুভূতিতে শেকল পরিয়ে রাখে, উন্নয়নের মাদকতায় আমাদের ভুলিয়ে রাখে, সেই মনের বাঁধ ভাঙার সময় এসেছে।

চিঠিপত্র : বিষয় : মেটিয়াবুরুজের বাংলাভাষার সংকট

বিষয় : মেটিয়াবুরুজের বাংলাভাষার সংকট

মন্থন সাময়িকীর মেজুন ২০১৩ সংখ্যায় আসরাফ আলি গাজি ও শাকিল মহিনউদ্দিনের লেখা মেটিয়াবুরুজের বাংলাভাষার সংকট নিবন্ধটা পড়ে কিছু ভাবনা উপস্থিত হয়েছে, সেগুলো প্রশ্ন আকারে রাখলাম$ এই বিষয়ে আরও বেশি যাঁরা জানেন, তাঁরা যাতে কিছু আলোকপাত করতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যেই এই চিঠি$

মেটিয়াবুরুজের বাঙালি দর্জিসমাজের ভাষা, শব্দ ও উচ্চারণবৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে আলোচনা শুরুর সময়ে লেখকরা জানিয়েছেন ওখানকার মিশ্র জনগোষ্ঠী কীভাবে গড়ে উঠেছে তার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস এবং তার পরে তাঁরা বলেছেন, ফলে বাংলা, হিন্দি, আরবি, ফারসি, উর্দু, বর্মী, সিঙ্গাপুরি সমস্ত শব্দ মিশে একাকার হয়েছে এই জনসমাজের ভাষায়$ আর উচ্চারণবৈশিষ্ট্যে ও প্রকাশ ভঙ্গিমায় এই ভাষা এক স্বতন্ত্র্য মাত্রা পেয়েছে আমাদের মান্য কথ্য বাংলা থেকে$তারপরের লাইনেই লিখছেন, সুতরাং বিকৃতির ভাষা এই জনসমাজেরই সৃষ্টি$ সেই বিকৃতির ধারা এখনও বর্তমান$অর্থাৎ, মান্য কথ্য যে বাংলা, লেখকদেরই ভাষায়, যে বাংলাকে শিক্ষিত হিন্দুসমাজ অনুকরণ ও অনুধাবন সূত্রে নিজের ভাষার স্বকীয়তাকে গ্রহণবর্জনের মধ্য দিয়ে আরও সুচারুরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছে, সেই বাংলা ভাষা থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে নিজেদের সীমাবদ্ধতাকে প্রকাশ করে মেটিয়াবুরুজ পৃথিবী নামক এক ভিনগ্রহের সনাতনপন্থী অধিবাসী হিসেবে স্বাতন্ত্র্যের পরিচয় দিয়েছে$পাশাপাশি তাঁরা দেখিয়েছেন, অথচ মেটিয়াবুরুজের পাশেই অবস্থিত সন্তোষপুর, আকড়া, চটা, চড়িয়াল অঞ্চলের মুসলিম জনগণ হিন্দু বাঙালিদের সংস্পর্শে নিজেদের ও নিজের কথ্য আঞ্চলিক ভাষাকে অনেকটাই শুদ্ধিকরণ করতে পেরেছে$

বিস্তারিত পড়ুন

বিপর্যয়ের একমাস পর কেমন আছে কেদারঘাটির মানুষ

শ্রীমান চক্রবর্তী ও শমীক সরকার

 লাপতা

$ হৃষিকেশের মূল বাসস্টপ লাপতা পোস্টারে ছয়লাপ দেখে চমকে উঠলাম$ কেদারনাথের বিপর্যয়ের যে কথা এতদিন খবরের কাগজে বা টিভিতে জেনেছি, তার সাক্ষাৎ পরিচয় আমাদের হল এইভাবেই$ রঙিন, সাদাকালো, জেরক্স, হাতে লেখা হরেক রকম পোস্টার, বিভিন্ন বয়ান, কোনোটাতে ফ্যামিলি ফোটোগ্রাফ তো আবার কোনোটা কেবল পাসপোর্ট ছবি$ মূল বক্তব্য একটাই কেদারনাথের বিপর্যয়ে হারিয়ে গেছে ছবির মানুষটি, নাম এই, বয়স এই$ সন্ধান চাই$ কোথাও কোথাও সন্ধান দেওয়ার ইনামও লেখা আছে$ এক লক্ষ টাকা অবধি ইনাম তো হামেশাই চোখে পড়ল$ একটা বিজ্ঞাপনও দেখলাম, স্থানীয় একটি ফোটোগ্রাফির দোকানের$ তারা বিনা পয়সায় (ফ্রিতে) কেদারে নিখোঁজ যাত্রীদের সন্ধান চেয়ে পোস্টার বানিয়ে দেবে$ আমাদের যাত্রাসঙ্গী, ছাত্র আন্দোলনের কর্মী কাটোদরের কুমায়ুনি যুবক পঙ্কজ বাওয়ারি বলল, এগুলোর ছবি তুলে রাখো!

$ বাসের জানলা থেকে জঙ্গলের রাস্তার পাশে চরে বেড়ানো কতকগুলো ষাঁড়কে দেখিয়ে পঙ্কজ বলল, ওই বলদগুলোর কোনো মালিক নেই$ উত্তরাখণ্ডে বিজেপি সরকারের আমলে গোহত্যা নিষিদ্ধ হয়েছে$ এখনকার কংগ্রেস সরকার এসে তা বহাল রেখেছে$ ফলে বলদ বেচাকেনা করা যায় না আগের মতো$ কিন্তু বলদ পোষার মতো ক্ষমতা যাদের নেই, তারা কী করবে? তারা বলদগুলোকে বাড়ি থেকে প্রচুর দূরে এনে ছেড়ে দেয়$ যদি বলদ কাউকে দিতে হয়, তাহলে বলদের সঙ্গে তাকে কয়েক হাজার টাকাও দিতে হয়$

বিস্তারিত পড়ুন

উত্তরাখণ্ডের বিপর্যয় এবং পুনর্গঠন

 

মেহের ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে ইন্দ্রনীল সাহার লেখা

 

উত্তরাখণ্ডের বিপর্যয় নিয়ে কথা বলতে গিয়েছিলাম মেহের ইঞ্জিনিয়ারের সাথে$ মূলত আমাদের উদ্দেশ্য ছিল বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি সম্পর্কে জানাবোঝা$ তার মধ্যে প্রাথমিক বিষয়টা ছিল এই ভয়াবহতার কারণ কী? আলোচনার শুরুতেই আমরা বলি, বিপর্যয়টা শুধুমাত্র উত্তরাখণ্ডেই সীমাবদ্ধ ছিল না$ বিপর্যয়ের বিশালতা রাজনৈতিক সীমারেখা মেনে চলেনি$ হিমালয়ের আশ্রয়ে থাকা ওই অঞ্চলের সমস্ত জায়গাই তার সীমার মধ্যে ছিল$ তারও আগে আমরা জানতে চাই এই বিপর্যয়টা কেন হল?

মেহেরদা কথা শুরু করলেন একটা শব্দের গল্প দিয়ে$ শব্দটা ২০০৫ সালের আগে আমাদের ভাষার মধ্যে ছিল না$ শব্দটা হল Cloudburst$ মুম্বাইয়ের Cloudburstএর আগে এই শব্দটা আমাদের, সমতলের মানুষদের ভাষার মধ্যে ছিল না$ তারপর লেহ্‌এর ঘটনা$ তার মানে কিন্তু এই নয় যে Cloudburstছিল না$ গোটা হিমালয় অঞ্চলেই Cloudburstএকটি সাধারণ ঘটনা$ পাহাড়ি মানুষরা জানে Cloudburstহবে, যখন হবে তখন নদী তেড়ে নেমে আসবে কারণ নদী ওখানে নালার মতো$ চওড়ায় অনেক কম$ সমতলের একূলওকূল নদীর সাথে তার কোনো তুলনাই করা চলে না$ সুতরাং Cloudburstএকটি সাধারণ ঘটনা এবং আদৌ অপ্রত্যাশিত নয়$ মেহেরদা বলে চললেন আমি যখন দেরাদুনে ছিলাম, ১৯৭০এর দশকে, আমি দেখতাম জুন মাসে বৃষ্টি আসতই না, জুলাইয়ে মাঝে মাঝে আসত, বর্ষা আসত আগস্ট থেকে$
বিস্তারিত পড়ুন

মণিপুরের ভুয়ো সংঘর্ষ সুপ্রিম কোর্ট নিয়োজিত কমিশনের রিপোর্ট ও সুপারিশ

আমি নীনা, ইইভিএফএএমএর সেক্রেটারি। ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর আমাদের পরিবারের দুপুরের খাওয়াদাওয়ার পরে আমার স্বামী নঙমেইথেম মাইকেল তাঁর এক বন্ধুর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। সেই বন্ধুর বাবার শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠানের আয়োজনে সাহায্য করার দরকার ছিল। সেখানে দুপুর তিনটে নাগাদ তাঁর কাছে একটা ফোন এসেছিল। তিনি বেরিয়ে গিয়েছিলেন। ৩টে ৩২ মিনিটে আমি ওঁর কাছ থেকে একটা ফোন পেলাম যে তাঁকে সন্দেহ করা হচ্ছে, আমি যেন ওঁর বোনকে ঘটনাটা জানাই। বোনের সঙ্গে পুলিশের ভালো যোগাযোগ ছিল, তাতে ওঁর ছাড়া পেতে সুবিধা হবে। আমি ঘটনাটা বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। তাই নিশ্চিত হওয়ার জন্য ওঁকে আবার ফোন করলাম। কিন্তু এবার তিনি ফোন ওঠালেন না। ফোনটা অন্য একজন তুললেন। যখন আমি তাঁকে আমার স্বামীর কথা জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি জানালেন, আমার স্বামী বাথরুমে গেছেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনারা এখন কোথায় আছেন? তিনি জবাব দিলেন, ওঁরা আমাদের বাড়ির কাছেই আছেন।

আমি ওঁর বোন আর পরিবারের সকলকে জানালাম। তাঁরা বিভিন্ন পুলিশ স্টেশনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেন। কিন্তু কোনো লাভ হল না। রাত নটার সময় আইএসটিভির সংবাদে আমি আমার স্বামীর নিথর দেহটা দেখতে পেলাম; ওঁকে সংঘর্ষে নিহত একজন মিলিট্যান্ট বা টেররিস্ট হিসেবে দেখানো হল, ওঁর দেহের পাশে নাকি একটা হ্যান্ড গ্রেনেড পাওয়া গেছে। আমি দেখে হতবাক হয়ে গেলাম, কীভাবে আমার স্বামীকে টেররিস্ট ছাপ দিয়ে মেরে ফেলা হল! …

মণিপুরে অবৈধভাবে হত্যা হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারবর্গের একটি সংস্থা ইইভিএফএএম (একস্ট্রাজুডিসিয়াল একজিকিউশন ভিক্টিম ফ্যামিলিজ অ্যাসোসিয়েশন মণিপুর) এবং অন্যান্যদের ২০১২ সালের একটি আবেদনের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট ৪ জানুয়ারি ২০১৩ একটি কমিশন গঠন করে। এই কমিশনে নিযুক্ত চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারক এন সন্তোষ হেগড়ে এবং দুই সদস্য জে এম লিংদো ও ডঃ অজয় কুমার সিংকে ১২ সপ্তাহ সময় দেওয়া হয় সম্পূর্ণ তদন্ত করে রিপোর্ট পেশ করার জন্য। যদিও আবেদনকারীরা ভুয়ো সংঘর্ষে ১৫০০র বেশি হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্ত সুপ্রিম কোর্টে তুলে ধরেছিলেন, কিন্তু ২০০৯২০১০ সালের প্রথম ৬টি ঘটনা নিয়ে কমিশনকে তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কমিশন ৩০ মার্চ রিপোর্ট পেশ করে। এতে প্রমাণিত হয়, এই ৬টি ঘটনায় মৃত আজাদ খান, খাম্‌বঙমায়ুম অর্সনজিত, নামেইরাকপাম গোবিন মেইতেই, নামেইরাকপাম নোবো মেইতেই, এলাঙবাম কিরণজিত সিং, চোঙথাম উমাকান্ত এবং আকোইজাম প্রিয়ব্রত কোনো সংঘর্ষে যুক্ত ছিলেন না এবং তাঁরা আদৌ আত্মরক্ষার জন্য (নিরাপত্তা বাহিনীর) কারোর দ্বারা খুন হননি, অর্থাৎ এঁদের একতরফাভাবে হত্যা করা হয়েছে।

বিস্তারিত পড়ুন

তিস্তা নদীর জলবন্টন নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ সওয়াল জবাব

 

মোঃ খালেকুজ্জামানের সঙ্গে দেবাশিস সেনগুপ্তের ইমেল সংলাপের সারাংশ (২৪৩১ জুলাই ২০১৩)

এক অববাহিকা থেকে অন্য অববাহিকায় জল স্থানান্তর প্রসঙ্গে

খালেক :আপনার প্রবন্ধ পড়ে ও সংযুক্ত ম্যাপ দেখে যেটা বুঝলাম তা হল যে গাজলডোবা থেকে তিস্তা নদীর প্রায় সব পানিই কৃত্রিম খালের মাধ্যমে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে পশ্চিমে মহানন্দা, মেচী, পুনর্ভবা, আত্রাই সহ অন্যান্য নদীর অববাহিকায় যা কিনা আন্তঃনদী সংযোগেরই নামান্তর$ প্রত্যেক নদীর অববাহিকার পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং সুরক্ষা সেই নদীর অববাহিকাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে এটাই কাম্য, ন্যায়সঙ্গত এবং বিজ্ঞানসম্মত$ অববাহিকাভিত্তিক পানি সম্পদের উন্নয়নই সারা দুনিয়ায় প্র্যাকটিস করা হয়ে থাকে$ এক নদীর পানি অন্য নদীর অববাহিকায় সরিয়ে নিয়ে সেচ এবং পানীয় জলের চাহিদা যদি হিসেব করা হয় (যেমনটা আপনার রিপোর্টে করা হয়েছে), তাহলে শুরুতেই শুভঙ্করের ফাঁকি থেকে যায়$ তিস্তার পানি সরিয়ে ফরাক্কার উজানে যদি গঙ্গার পানি প্রবাহ বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়, তাহলে তিস্তার বর্ষাকালীন পানিও পর্যাপ্ত হবে না$

বিস্তারিত পড়ুন

তিস্তা নদীর পানি বন্টনের রূপরেখা

মোঃ খালেকুজ্জামান

পানির অপর নাম যেমন জীবন, তেমনই বাংলাদেশের অপর নাম নদী$ হয়তো এই সত্যটা বাঙালিরা বরাবরই জানতো, আর তাই সঙ্গত ভাবেই স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রাক্কালে সবার একটি প্রিয় স্লোগান ছিল, তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা, মেঘনা, যমুনা$ বাংলাদেশের ৮০% এলাকাই নদীপ্লাবন ভূমি$ নদীবাহিত পলিমাটির স্তরায়নের মাধ্যমেই কোটি কোটি বছর ধরে বঙ্গীয় বদ্বীপের সৃষ্টি হয়েছে$ আর তাই, বাংলাদেশের প্রতিটি নদীর স্বাস্থ্যের উপরই দেশের প্রকৃতি এবং অর্থনীতির স্বাস্থ্যও নির্ভরশীল$ নদীর গতিপ্রকৃতির উপর নির্ভর করেই প্রতিটি নদীর অববাহিকায় গড়ে উঠে জীববৈচিত্র্য এবং সমাজ ও সভ্যতার সোপান$ সে অর্থে প্রতিটি নদীর অববাহিকার পরিবেশ, প্রতিবেশ, কৃষি, স্য সম্পদ, নৌচলাচল, শিল্পকারখানা, এবং সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডই আবর্তিত হয় নদীর প্রবাহমানতা উপর ভিত্তি করেই$তিস্তা নদীর অববাহিকায় বিদ্যমান প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য ও বসবাসরত জনগোষ্ঠীর বেলায়ও এ কথাটি সর্বতভাবে প্রযোজ্য$

বিস্তারিত পড়ুন