জিল দেল্যুজ
১. ঐতিহাসিক
ফুকো অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীতে নিয়মানুবর্তী সমাজের উপস্থিতি চিহ্নিত করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর গোড়ায় সেগুলি তাদের শিখরে পৌঁছেছিল। সেগুলি এগিয়ে যাচ্ছিল বিশালাকার পরিবেষ্টনগুলির এক সংগঠনের দিকে। ব্যক্তি সেখানে অবিরত এক পরিবেষ্টন থেকে অপর একটিতে যেত, প্রতিটি পরিবেষ্টনের ছিল নিজস্ব কিছু নিয়ম : প্রথমে পরিবারে, তারপর স্কুলে (‘তুমি আর নিজের বাড়িতে নেই’), তারপর ব্যারাকে (‘তুমি আর স্কুলে নও’), তারপর কারখানায়, মাঝেমাঝে হাসপাতালে, হয়তো কখনো কারাগারে, যা নিজেই চমৎকার এক পরিবেষ্টন। কারাগারই হল পরিবেষ্টনের আদর্শ মডেল : রোসেলিনির ইউরোপা’৫১-এর নায়িকা কিছু শ্রমিককে দেখে চমকে গিয়ে বলেছিলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম সাজাপ্রাপ্ত কিছু লোক দেখছি!’ [অনুবাদকের নোট : ১৯৫২ সালে ইতালিয়ান চলচিত্র পরিচালক রবার্তো রোসেলিনির সিনেমা ইউরোপা’৫১ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ইউরোপের একটি চিত্রায়ণ। নায়িকা রোম শহরের এক ধনী ঘরের বউ, একমাত্র সন্তানের আকস্মিক মৃত্যুর পর সে এক কমিউনিস্ট বন্ধুর পাল্লায় পড়ে রোমের গরীব পাড়ায় যাতায়াত শুরু করে। সেই পাড়ার এক ছয় সন্তানের মা-কে একটি কারখানায় কাজ পাইয়ে দিতে গিয়ে সে প্রত্যক্ষ করে কারখানা, শ্রমিক।]
ফুকো চমৎকারভাবে পরিবেষ্টনের এই আদর্শ প্রকল্পটি ব্যাখ্যা করেছিলেন, যা বিশেষভাবে কারখানায় দেখা যায় : এক জায়গায় জড়ো করা; জায়গাটাতে ভালোভাবে ছড়িয়ে দেওয়া; সময়ে সময়ে আদেশ করা; ওই স্থান-কালে একটা উৎপাদিকা শক্তি গড়ে তোলা, যার ফলাফল তার অংশগুলির শক্তির সমষ্টির তুলনায় বেশি হয়। কিন্তু ফুকো এই প্রকল্পের সার কথাটিও জানতেন : এটা এসেছে এক সার্বভৌম সমাজের পরে, যার লক্ষ্য এবং কার্যপ্রণালী ছিল সম্পূর্ণ আলাদা (উৎপাদন সংগঠিত না করে তার ওপর কর চাপানো; জীবন কীভাবে চলবে তা ঠিক না করে মৃত্যুর আইন জারি করা)। আস্তে আস্তে এই অতিক্রমণ ঘটেছে, এবং নেপোলিয়নকেই মনে হয় এই এক সমাজ থেকে অন্য সমাজে ব্যাপক রূপান্তরের কারক। কিন্তু এই নিয়মানুবর্তিতা এবং তার প্রণালী একটা সংকটে পড়ল, যখন নয়া শক্তিগুলি জিইয়ে উঠল। এই নয়া শক্তিগুলি ক্রমান্বয়ে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছিল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তা গতি পেল : নিয়মানুবর্তী সমাজ, যেখানে আমরা খুব একটা আর ছিলামও না, সেই সমাজে আর আমরা একেবারেই থাকলাম না।